শিরোনাম: "তোমার চোখে আমার সকাল: এক অমলিন প্রেমের গল্প"
ছবির উৎস এআই
ভূমিকা:
ভালোবাসা কখনো সময় দেখে আসে না, জায়গা দেখে থামে না। দুইটি অচেনা হৃদয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা অনুভবই কখনো কখনো জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। আজ এমনই একটি হৃদয়ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প বলব—ইয়াস আর মধুমিতার।
প্রথম পরিচয়
মফস্বলের ছোট্ট শহর চন্দ্রপুর। একদম শান্ত, সরল জীবন। এখানকার মানুষগুলোও বড় মায়াবি। শহরের একমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল ইয়াস। গ্রামের ছেলে হলেও পড়াশোনায় ভালো, পরিবার থেকে দূরে প্রথমবারের মতো মেসে উঠেছিল সে।
মধুমিতা ছিল ওই একই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সে শহরেরই মেয়ে—চুপচাপ, চোখে গভীরতা, আর হাসিতে একরাশ দিগন্ত। প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজের লাইব্রেরিতে। মধুমিতা একটা বই খুঁজছিল, হঠাৎ তার হাতটা বাড়িয়ে দিল ইয়াস, একই বই ধরার জন্য।
চোখে চোখ পড়েছিল। দুজনেই হেসে ফেলেছিল অজান্তেই।
ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব
প্রথম কয়েকটা দিন শুধুই দেখা-সাক্ষাৎ আর ‘হ্যালো-হাই’-তেই কাটল। ধীরে ধীরে দুজনের মাঝখানে গড়ে উঠল বন্ধুত্ব। কলেজ ক্যান্টিনে একসাথে চা খাওয়া, লাইব্রেরিতে পড়াশোনা, বিকেলের আড্ডা—সব কিছুতেই যেন দুজনের উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল।
একদিন বিকেলে ছাদে বসে মধুমিতা বলল,
– "তুই জানিস, ইয়াস, তোকে দেখে আমার একরকম শান্তি লাগে।"
ইয়াস একটু লাজুক হেসে বলেছিল,
– "তুই হাসলে মনে হয়, দিনটা ভালো যাবে।"
প্রেমের প্রকাশ
তাদের বন্ধুত্ব যে ভালোবাসায় রূপ নিচ্ছে, তা বুঝে ফেলেছিল চারপাশের সবাই। শুধু তারা দুজন মুখে কিছু বলত না। কিন্তু অনুভবের ভাষা কি মুখে বলা লাগে?
একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। সবাই চলে গেছে। মধুমিতা ছাতা আনেনি। ইয়াস এসে নিজের ছাতার নিচে নিয়ে বলল,
– "চল, তোকে নামিয়ে দেই।"
সেই ছোট ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে, হালকা কাঁপতে কাঁপতে মধুমিতা জিজ্ঞেস করল,
– "ইয়াস, তোকে যদি হারিয়ে ফেলি, কী করবি?"
ইয়াস শান্ত স্বরে বলেছিল,
– "তুই হারালে আমি নিজেকে খুঁজে পাব না আর।"
সেদিন চোখে চোখ রেখে দুজন চুপ করে ছিল। তাদের মাঝে শব্দের দরকার পড়েনি।
একসাথে কাটানো মুহূর্ত
এরপর শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়—ভালোবাসার। কলেজের প্রতিটি দিন হয়ে উঠল বিশেষ। ইয়াস মধুমিতার জন্য হাতের লেখা চিঠি লিখত। আর মধুমিতা প্রতিদিন কলেজ শেষে অপেক্ষা করত একই জায়গায়, ছাতিম গাছটার নিচে।
তারা স্বপ্ন দেখত একসাথে বাড়ি করার, রাত্রে ছাদে শুয়ে তারা দেখার, একসাথে বই পড়ার, আর জীবনের প্রতিটি দিন একে অপরকে ছুঁয়ে বাঁচার।
বাধা আসে
ভালোবাসা কখনো কখনো সময়ের কাছে হেরে যায়। মধুমিতার পরিবার তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব পায় এক ধনী পরিবারের ছেলের কাছ থেকে। মা-বাবার চাপ, সমাজের ভয় আর অনিশ্চয়তার সামনে দাঁড়িয়ে মধুমিতা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
ইয়াস বুঝতে পারে—সবকিছু তারা একসাথে পেলেও, সমাজের বাঁধনটা বড় জোরালো।
এক সন্ধ্যায় তারা দেখা করে ছাতিম গাছটার নিচে। অনেকক্ষণ চুপ থেকে ইয়াস বলল,
– "তুই যদি চলে যেতে চাস, আমি তোকে থামাব না। কারণ ভালোবাসা মানেই তো বাধা নয়, ভালোবাসা মানে তো মুক্তি।"
মধুমিতা কেঁদে ফেলেছিল। তার চোখে ছিল হাজারটা না বলা কথা।
বিচ্ছেদ, না অপেক্ষা?
শেষ পর্যন্ত মধুমিতা বিয়ে করে না। সে পরিবারকে বোঝাতে পারে না ঠিকই, তবে সাহস করে বলে দেয়—"আমি কাউকে ভালোবাসি। আর সেটা ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।"
বাড়ি থেকে বাধা আসে, রাগ, অভিমান, শাস্তি। তবু মধুমিতা নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
ইয়াস তখন চাকরির খোঁজে ঢাকায় চলে যায়। প্রতিদিন রাতের আকাশে তারা দেখে মনে পড়ে মধুমিতার কথা। তারা কথা বলে না, দেখা হয় না, তবু দুজনেই জানে—এই সম্পর্কটা এখনও বেঁচে আছে।
শেষ দৃশ্য
তিন বছর পর, এক বিকেলে আবার ছাতিম গাছটার নিচে দেখা হয়। কেউ কাউকে ফোন করে না, কেউ কাউকে চিঠিও লেখে না। শুধু গিয়ে দাঁড়ায়।
মধুমিতা তখন একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে, ইয়াস একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছে। দুজনের চোখে অনেক অভিজ্ঞতা, অনেক কষ্ট, তবু একইরকম উষ্ণতা।
মধুমিতা বলল,
– "তোর হাতে এখনও সেই চিঠিগুলো আছে?"
ইয়াস পকেট থেকে একটি ভাঁজ করা কাগজ বের করে বলল,
– "এটা শেষ চিঠি ছিল, তোকে দেওয়া হয়নি। এখন দেব?"
মধুমিতা হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিল। চিঠিতে লেখা ছিল:
“তুই থাকিস বা না থাকিস, আমি প্রতিদিন তোর চোখেই আমার সকাল খুঁজি।"
সেদিন বিকেলের আলো যেন একটু বেশি মায়াবি ছিল। ছাতিম গাছের পাতা কাঁপছিল বাতাসে। আর দুটো হৃদয়—তারা চুপচাপ বসেছিল, জানত—ভালোবাসা হারায় না, শুধু সময় নেয় পরিণত হতে।
উপসংহার:
ইয়াস আর মধুমিতার ভালোবাসা কোনও বড়সড় চমক নয়, কোনও নাটকীয়তা নয়—এটা আমাদের আশেপাশের প্রতিটি মানুষের গল্প। একটু সাহস, একটু সময় আর অনেকটা বিশ্বাস থাকলেই ভালোবাসা বেঁচে থাকে।
Comments
Post a Comment