গল্পের নাম: “চতুর্থ তলার অন্ধকার
ভূমিকাঃ]
১৯৯৮ সাল। ঢাকার একটি পুরনো সরকারি কোয়ার্টার—লোকেরা বলে এখানে একটা ঘর আছে যেটাতে কেউ টিকতে পারে না। কেউ গেলে রাতে ছাদের দরজা খুলে যায়, দেয়ালের মধ্য থেকে কেউ ডাকতে থাকে, আর মুখের সামনে কে যেন নিঃশ্বাস ফেলে।
এই গল্প বলেছিলেন রাশেদ ভাই—তিনি তখন এই কোয়ার্টারের নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন। তিনিই এই ভয়ানক ঘটনাগুলোর সাক্ষী।
[১ম অংশ: চাকরি আর নতুন বাসা]
রাশেদ ভাই বলছিলেন, “আমি তখন সদ্য ঢাকায় চাকরি নিয়েছি। স্ত্রী আর এক বছরের বাচ্চা নিয়ে সরকারি কোয়ার্টারে উঠলাম। কিন্তু সমস্যা হলো—আমাকে যে ফ্ল্যাট দেওয়া হলো সেটা চতুর্থ তলায়, ৪/বি নম্বর। আর ঐ ফ্ল্যাটটা খালি ছিল ৭ বছর!”
তবে চাকরি পেয়েই বাসা ফেরত দিতে মন চাইলো না। সাহস করে উঠেই পড়লেন।
প্রথম দুদিন কিছু হয়নি। কিন্তু তৃতীয় রাতে শুরু হয় সব...
[২য় অংশ: দরজার আওয়াজ আর শিশুর কান্না]
রাত ২টা। বাচ্চাটা হঠাৎ কাঁদতে শুরু করল। স্ত্রী বললো, “ওর বুকটা যেন ভারী হয়ে গেছে। কেউ যেন চেপে ধরেছে।”
সেই সময় রান্নাঘরের পাশ থেকে “টক...টক...” করে দরজার শব্দ এলো। রাশেদ ভাই টর্চ নিয়ে বের হলেন—কিন্তু বাইরে কেউ নেই। ছাদেও কেউ নেই।
চতুর্থ দিনের রাত—স্ত্রী বলল, “এই ঘরে একটা মহিলা থাকে... আমি স্বপ্নে দেখেছি। সে আমাকে বলে, ‘তুমি আমার জায়গায় এসেছো।’”
রাশেদ ভাই কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “আমার বাচ্চার গায়ে সেই রাতে ছোট ছোট আঁচড় পড়ে ছিল। একেবারে নখের মতো লম্বা দাগ।”
[৩য় অংশ: ছাদের ঘর আর ‘সে’]
পরের দিন তারা স্থির করলেন ছাদে উঠবেন—দেখবেন সেখানে কিছু আছে কি না। ছাদে একটা ছোট ঘর, তালা দেওয়া ছিল। কিন্তু তালায় ধুলো ছিল না—মানে, কেউ যেন প্রতিদিন ব্যবহার করে।
এক রাতে হঠাৎ সেই তালা খুলে গেল নিজে থেকেই।
ভেতরটা ছিল একেবারে গন্ধে ভরা, যেন অনেক পুরনো কাপড় আর কিছু পচা কিছু ছিল। দেয়ালের এক কোণে লাল সিঁদুর দিয়ে লেখা—
"আমি এখনো এখানে আছি। তোমাদেরকে ছাড়বো না।"
সেদিন থেকে প্রতিরাতে তারা একই কিছুর মুখোমুখি হতে থাকেন—কখনো মহিলা কাঁদছে, কখনো শিশুর কণ্ঠে হেসে উঠছে কেউ।
[৪র্থ অংশ: চুক্তি]
একদিন এক বৃদ্ধা এলেন, পাশের বাসার। বললেন, “বাবা, এই ফ্ল্যাটে কেউ টেকে না। আগের পরিবারটির মা-বাবা মারা যায় গ্যাস লাইনে আগুন ধরে। কিন্তু তাদের মেয়েটা... হারিয়ে যায়। কেউ খুঁজে পায়নি।”
“অনেকে বলে ছাদের ঘরে সে ছিল... সেদিন থেকেই এই ফ্ল্যাট অভিশপ্ত।”
[শেষ রাত: দরজার পেছনে কে?]
সেই রাতে দরজায় টোকা পড়লো আবার। কিন্তু এবার সেই মহিলার গলা শোনা গেল, “আমার ঘর ছেড়ে দাও... আমি বেঁচে থাকতে চাই... আমি মরিনি...!”
সকালবেলা তারা বাসা ছেড়ে চলে গেলেন। অফিসে বলে অন্য বাসায় উঠলেন। আর কোনোদিন চতুর্থ তলায় যাননি।
✅ উপসংহার
রাশেদ ভাই এখনো বলেন, “আমার সন্তান বড় হয়েছে, স্ত্রীও ঠিক আছেন। কিন্তু সেই বাসার স্মৃতি এখনো দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসে। কখনো বাসার কোথাও হালকা বাতাস
ছবি এবং গল্পের উৎস এআইলাগে, মনে হয়—সে এখনো পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।”
Comments
Post a Comment